স্বদেশ ডেস্ক:
মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গত রোববার দুপুরে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সোমবার আদালতে তোলা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাকে সাত দিনের রিমান্ডে দেন। রিমান্ডে বেশ কয়েকটি বিষয় স্বীকার করে নিয়েছেন হেফাজতের এই নেতা। তিন বিয়ের মধ্যে দুটি চুক্তিভিত্তিক, বিয়ে-সংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকা, হেফাজতের অধিকাংশ কর্মসূচি ঘিরে কেন তাণ্ডব ও নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে- বিষয়গুলো নিয়ে রিমান্ডে নিজের ঘাড়ে দায় নিয়েছেন মামুনুল।
গতকাল সোমবার রিমান্ডে নেওয়ার পর নিজের বিয়ের ব্যাপারে পুলিশে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাওলানা মামুনুল। জানান, প্রথম বিয়ে ছাড়া দুই জান্নাতকেই কন্ট্রাকচ্যুয়াল (চুক্তিভিত্তিক) বিয়ে করেছিলেন তিনি। অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতেই দুই তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
রিমান্ডে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্ট কাণ্ডের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে হেফাজতের এই নেতা জানান, শুরুতে স্বীকার করলে প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা বড় ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতেন বলে তিনি আশঙ্কা করছিলেন। এ ভয়ের কারণে প্রথমে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন বলেও জানান।
রিমান্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে মামুনুল আরও জানান, যে দুটি বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ওই দুই নারীর সঙ্গে অনেক দিন ধরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছেন তিনি। তার কাছে এ দুই বিয়ের কোনো কাবিন-বৈধ কাগজপত্র নেই।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম বিয়ে ছাড়া বাকি দুই বিয়ের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি মামুনুল। বিয়ের স্বাক্ষীদের নাম প্রকাশের ক্ষেত্রেও তিনি টাল-বাহানা করছেন। ওই দুই নারীর ডিভোর্স হওয়ায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই তাদের দিকে এগিয়ে যান তিনি। একজনকে মোহাম্মদপুরের একটি মাদ্রাসায় চাকরিও দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা আরও জানান, মামুনুলের কথিত ছোট স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি। তবে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন তিনি। তার প্রথম স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়বা। কথিত মেজ ও ছোট স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের কোনো কাবিন হয়নি বলে পুলিশকে জানান মামুনুল।
রিমান্ডে হেফাজতের অধিকাংশ কর্মসূচি ঘিরে কেন তাণ্ডব ও নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে জানতে চাইলে মামুনুল বলেছেন, ‘আমি যেহেতু নেতা, এর দায় আমারও রয়েছে। আমাকে এর দায় নিতে হবে। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনও তো সংঘাতে জড়ায়।’ এ ছাড়া হেফাজতে ইসলাম যখন একটি সংগঠনের নাম, সে ক্ষেত্রে তারা কেন অন্যান্য দলের খারাপ দৃষ্টান্ত অনুকরণ করবে প্রশ্ন করা হলে মামুনুল চুপ ছিলেন।
২০১৩ সালে হেফাজতের কর্মসূচিতে জ্বালাও-পোড়াও, পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন দেওয়া, বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যাপারে মামুনুলকে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু তিনি এসবের কোনো স্পষ্ট জবাব দেননি। হেফাজতের অর্থনৈতিক প্রবাহ কোন মাধ্যম থেকে আসে এমন প্রশ্নের জবাবে চুপ ছিলেন মামুনুল। তিনি অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
পুলিশ জানিয়েছে, মামুনুলের কথিত দুই বিয়ের সাক্ষীদের শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। একই সঙ্গে রিমান্ডে তাকে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের যে মামলায় মামুনুলকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, সে-সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ গতকাল জব্দ করা হয়েছে। মূলত, তাবলিগ জামাতকে কেন্দ্র করে জুবায়ের ও মোহাম্মদ সাদ কান্ধালভি গ্রুপের মধ্যে ওই মারামারি এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। জানা গেছে, মামুনুল ছিলেন জুবায়েরপন্থী।
আদালতের নির্দেশে ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মামুনুলকে নিরাপত্তার স্বার্থেই কেবল গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে আমার অফিসাররা গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। আজ মঙ্গলবার আমি নিজেই জিজ্ঞাসাবাদে থাকব। এখন পর্যন্ত মামুনুল প্রথম বিয়ে ছাড়া বাকি দুই বিয়ের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। এমনকি বিয়ের স্বাক্ষীদের নাম প্রকাশের ব্যাপারেও গড়িমসি করছেন। দ্বিতীয় জান্নাতের ভাই শাহজাহানের জিডি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই মামুনুল হকের কাছে তার কথিত বিয়ে এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গ করার বিষয় জানতে চাওয়া হয়। বিয়ের ব্যাপারে তিনি নিজের মতো ব্যাখ্যা দেন। তবে এটা স্বীকার করেছেন, এসব বিয়ের কোনো আইনগত প্রমাণ তার কাছে নেই। অন্য প্রশ্নে চুপ থাকেন তিনি।’
মারধর, হুমকি, ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃত গোলযোগ সৃষ্টি, চুরির অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় গত বছর দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল হেফাজত নেতা মামুনুলকে ৭ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল হক এ রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তার আবেদন মঞ্জুর করেন।